সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

বারোমাস্যা

বারোমাস্যা

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)



সেই মেয়েটি এখন
ছেলেটার কাছে ; শুধুই সাজানো সার-সার অলংকৃত স্মৃতির সাথে
পুঁজি হয়ে রয়ে গেছে।
তাছাড়া আর কিই-বা করতে পারে বেচারা হতভাগা ছেলেটা
‘অন্য আর এক মেয়ের সাথে’ এখন যে তার
বিয়ে হয়ে গেছে।
তাকে, বউ নামের এই তুচ্ছ-জরুরি সামগ্রটিকে গ্রহণ করতে হয়েছে
‘জোর করেই’

ছেলেটি এখন আদ্যোপ্রান্ত ভীষণ ব্যস্ত
এই নতুন মেয়েটির গুচ্ছ গুচ্ছ সংসার সাজাতে।
কিন্তু নিরুপায়-অবুঝবখাটে ছেলেটি কি পারবে :
এতসব প্রার্থিব-অপ্রার্থিব ব্যথাকে এতটুকু বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখে
এই নতুন মেয়েটির প্রতিটা যাবতীয় চাহিদা মেটাতে ?

শুধু মেয়েটির কথা ভেবে ভেবে
                   এই ছেলেটি এখন
‘না-ভালোবেসেও’ অনেক কিছু করে
যেমন ইচ্ছা না থাকলেও
তবু প্রতিরাতে একান্ত হতে হয় ;
এই নতুন অচেনা অপ্রতিভ মেয়েটির সাথে।
অপরাধ জেনেও
শুধুমাত্র বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-সজ্জন, বাবা-মা আর সমাজের অননুযোগের ভয়ে ;
তাকে ‘ভালোবাসার নামে’ নিঃশেষে ধর্ষন করতে হয়
মেয়েটিকে।

এছাড়া
একপ্রকারের বাধ্য হয়েই
               মৃত্যুর দিন পর্যন্ত
শুধু ‘এই মেয়েটিকেই’ তার মেয়ের মা করে ;
তার সব একান্ত অভিনব দুরদার স্বপ্নের স্বপ্নচারিনী ভেবে ;
সারাটাজীবন শুধু সাথে করে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে।
আর তার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বিস্তৃত দিনগুলো ;
তাকে শুধুই মঞ্জুর হওয়া মৃত্যুর কাছাকাছি ঠিকানায় রেখে
রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করবে।
কেউ কোনোদিন পড়বেনা ছেলেটার নিঝুম মনের কথা !
তার গোপন মগ্ন ভালোবাসার কথা ;
গোপন অবধারিত ব্যথা হয়েই রয়ে যাবে।


ভবদীয়

ভবদীয়

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




যেখানেই থাকি
তোমার ঐ লাবণ্যে মাখামাখি শরীরে মিশে থাকে :
          আমার চোখ ;
          আমার হাত।

যেখানেই থাকি
অজান্তেই আমার ঠোঁটে, আপনা হতেই উঠে আসে :
          তোমার নাম ;
          তোমার ছবি।

যেখানেই থাকি
আমার সমগ্র পাওয়াকে জড়িয়ে থাকে ঠিকই :
          তোমার চাওয়া ;
          তোমার বিলুণ্ঠি।    



সুব্রত সামন্ত (বুবাই)-এর প্রেমের কবিতা 

প্রেতাত্মা এবং প্রেতছায়া

প্রেতাত্মা এবং প্রেতছায়া

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)


সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো সত্যিকারের মিথ্যেকে কীরকমভাবে আঁকড়ে ধরছে।

সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো মিথ্যেকারের সত্যিকে কীরকমভাবে আঁকড়ে ধরছে।

সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো মিথ্যেকারের মিথ্যেকে কীরকমভাবে আঁকড়ে ধরছে।

সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো সত্যিকারের সত্যি থেকে কীরকমভাবে সত্যি-সত্যিই দূরে সরে যাছে।   


আমাদের ভালোবাসার গল্প

আমাদের ভালোবাসার গল্প

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




আমার অপেক্ষার ডালপালাজুড়ে নাই-বা চাঁপা হয়ে ফুটলে ;
আমার গছানো আকাঙ্ক্ষায় বাগিচায় দু’দণ্ড বসে
নাই-বা কোকিল হয়ে গেয়ে গেলে ;
                                    ক্ষতি কি
সেই ভালো , আমি তবুও বিলম্বিত প্রহর গুনে গুনে টানা অপেক্ষা করব।
আর এভাবেই সহাস্যে নিজের ভেতর নিজেকে আবারও হত্যা করে
কাটিয়ে দেবো : ‘আরো একটা অখণ্ড বসন্ত’।
কে জানে এভাবে না-পুরানো অসহ্য রাত জেগে
ব্যাথা জমা করা তুমুল মন খারাপ নিয়ে,
আরো কতগুলো উপন্যাসের মৃত্যু দেখব ?
আর হৃদয়ের ভাঁড়ে অবিরাম নষ্ট হওয়ার কষ্ট জমাবো ?
পাশাপাশি, নিজেকে আরো আড়ালে গেঁথে রেখে
নিজেকেই আরো জব্দ করব।

ডাকপ্রিয়ন, টেলিফোন, কোকিল ডাকা, পথ চেয়ে থাকা...
এগুলো তবুও নানারঙে এমনই অস্থির বেহাল থাকবে ;
যতখানি ‘হৃদয়ভাঙা-হৃদয়ে’ হৃদয় জমে থাকে অনন্ত।
বাসর সাজিয়ে পালকি পাঠিয়ে
                          দু’হাতে মেহেদি, সিঁথিতে সিঁদুর
বুকে ধুক ধুক, একখানা চুমু...
লোকে নাই-বা সেসব কিছু জানল ! অতশত !

লোকে নাহয় জানবে:
আমাদের ভালোবাসার গল্প ;
হ্যাঁ রূপা, তোমার আমার প্রেমের কথা অল্প অল্প। 





সুব্রত সামন্ত (বুবাই)
খানাকুল , হুগলী
১৪.১২.২০১৫

দিগন্ত

দিগন্ত

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)

“সখী লুকিয়ে লুকিয়ে হাজার কারচুপি করে
একপৃথিবী মেলামেশা
আর মনে অ্যাকাউন্টে জমিয়ে কিছু
মন ভরতি খুচরো-নগদ
কোমল নিষাদ ভয় ;
বাড়িতে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে—
আকাশ সমান অভিনয় করে
বাড়িয়ে বাড়িয়ে সাড়ে আঠানব্বই রকমের
মিথ্যার জঞ্জাল বাড়াতে হয়।
এরপর শরীরে বহুকালের জমানো
গোলাপভেজা শিশিরের প্রলেপ লাগাবে
পাঁচখানা সম্মতির চাঁদ।
মন করবে কেমন কেমন !
আত্মজ স্বপ্নের খোঁজে কঁকিয়ে উঠবে অন্যান্য সমস্ত অন্তর্গত কোলাহলেরা
নতুন ঠিকানা হবে অনেকখানি জাতীয়বেদনার জবরদখল।
উপচে ওঠা ফেরারি সর্মপণের স্পর্ধা মধ্যান্তরে মিশে
গড়বে সাড়ে তিনহাতের হৃদয় টাটানো সম্পর্ক।

তাকেই তো সখী ভালোবাসা কয়।”  


আজন্ম

আজন্ম

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




যত দুঃখ দেবে দাও, কিলো-গ্রাম হিসাবে সব সহ্য করব
ভালোবেসে নিতে পারি
তোমারও সবটুকু ‘রক্ত-মাংসে-গড়া’ দীর্ঘ সিরিজের এই কষ্ট।
তবু শুধু ক্যালেন্ডারের খাপগুলোতে আমাকেই তলব কর।
আজীবন না হোক ; নাহয় ভুল করেই একরত্তি ডাকো
যেখানেই থাকিযতদূরেই থাকি
ঝোলাঝুলি নিয়ে সময়মতো ঠিকই পৌঁছে যাবো।
বুকের মধ্যে স্বরলিপি ছাপিয়ে আজানু ব্যাপক সন্ধ্যা ঘনালে
অস্থির চেতনায় মধ্যে একটানা গোঁয়ার ‘কান্নাপাওয়া বৃষ্টি’ নামলে
চেনা পথে আবারও পা হারাবার চিরকালের আবেগমাখা
দিস্তে দিস্তে হুলুস্থুলু ইচ্ছাটুকু হলে
রাজকীয় প্রত্যাশায় বিছানো সূচিপত্রে একমুঠো শব্দ ফের
টুপটাপ ঝরে পড়লে
শুধু এই আমাকেই তলব কর ;
যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি
সমস্ত বিচরণ ভুলে, অনন্ত চৈত্রের সাথে বাসি হৃদয়ে
বহুদূর অব্দি দ্রুত ভেসে এসে পুনরায় কবুল করব।

কেন, তোমার হাসিখুশির রৌদ্রে চলকে ওঠা হৃদয়ের রাজধানীতে
এত সারি সারি ঘুমের অজানিত প্রবাহী স্বপ্নহরণ ?
কেন, তোমার স্বপ্নের ডিম পাড়া এই সুখের অলিন্দে এতসব
অহেতুক ভারী ভাঙচুর পারিজাত রক্তক্ষরণ ?
কাছে গিয়ে, প্রণয়-মার-খাওয়া বিবাগী নদী হয়ে
আমি আবারও এলোমেলো ভালোবেসে একটাএকটা করে
সবকিছু জানতে চাইব।
পারানি না নিয়েই তোমাকে ঠিকই, অনিবার্য পার করে দেবো।

এত এত ভালোবাসবার পরেও ;
তবু কেন জানি না
তোমাকে ছেড়ে তবু অনায়াসেই দূরে সরে থাকতে হয়
মোটের উপর এর চেয়ে বড় কিছু হিতব্রতী কষ্ট হয় ?
সিলেবাসে কোথাও এর চেয়ে বড় ! আছে নাকি কিছু
নাকাল করা ভয়ের মতো ভয় ?
কারো কাছে জানা আছে কি এর সঠিক দুঃখমোচী-স্পর্ধিত উত্তর ?
এরপরেও তুমি অবলীলায় খুব বেশি আলো করে বসে থাকো অপরের ঘর।
অথচ আমি আজও তোমার মতো ভুল আবেগে তোমাকে ভুলে
ছককষে হতে পারি নি : মুখোমুখি ‘ঘোরতর-নিষ্ঠুর-নির্দয়’    



অডিও সিডি - "কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল"
https://web.facebook.com/profile.php?id=100005822866092

অডিও সিডি - "কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল" এর প্রথম অংশ

রজতউপস্থিত প্রিয় সুধী শ্রোতাবৃন্দ, আমার আজকের এই ছোটো আয়োজনে আপনাদের সবাইকে আমার পক্ষ থেকে হৃদয়ভরা সাদর আমন্ত্রণ। আমি রজত। উচ্চতা ১৭৩ সেন্টিমিটার, গায়ের রঙ ঈষৎ কালো, রক্তের গ্রুপ ‘ও’ প্রজেটিভ, পাল্84 mnt, বিশেষচিহ্ন ডানকানের উপরের দিকে লম্বালম্বিভাবে ছোটো একটা কাটা দাগ আছে নেশা অবশ্য একটা আছে। আর সেটা হল কবিতা। আজকে আপনারা শুনবেন আমার কথা, আমার জীবনের কথা, আমার প্রেমের কথা। জানি সেসব শুনতে হয়ত কারো কারো ভালো লাগবে ; আবার হয়ত-বা কারো মোটেই ভালো লাগবেনা। কিন্তু সেসবে আমার বিশেষ কিছুই যায় আসে নাকেননা সমস্ত ধরনের উপেক্ষা অপমান অবহেলাকে সহ্য করে আমি গতকাল, পরশু ও তরশু রূপাকে ভালোবেসেছিলাম। আজও বাসি। আর আগামিকাল, পরশু এবং তরশুও এই রূপাকেই একইরকমভাবে রাশহীন-উদ্দাম ভালোবেসে যাবো। আর তার বিনিময়ে বাকি সারাটা জীবন যদি শুধু শূন্য বুকেতে সোনার বরণ গুচ্ছ গুচ্ছ দুঃখ বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় তো বেড়াবো।

জানেন, রূপাকে দেখার আগে পর্যন্ত আমি ভাবতাম সারা পৃথিবীতে অহরহ কতশত প্রেম ঘটে চলেছে ; তবে এতদিনেও কেন কেউ আমার জীবনে আসছেনা ? আর মনে মনে কেবলই বলতাম, হে ঈশ্বর এবার অন্তত কাউকে পাঠান ; যার পঞ্চমুখী বর্ণময় আবেগি-আগমনে এই পোড়খাওয়া খাঁ-খাঁ হৃদয়কে আমিও উল্লেখ করতে পারি কানাকানি প্রেমের ব্যস্ত বেসামাল মহকুমার হিসাবে। যার সর্বোব্যাপী ও সর্বগ্রাসী জাঁকজমকপূর্ণ আগমনে ভিতরের সবকটা আজন্মের বন্ধ দরজা শেষমেষ আবার খুলে যাবে ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ তুলে। সীমাহীন সুখের বাক্স-ভরতি সুশ্রী-শুভকাঙ্ক্ষী বাতি হাতে না হোক ; অন্তত চরম সর্বনাশের বারোটা বাজা চলমান লাভা নিয়েই একজনকে পাঠান তবুও পাঠানআমার যে আর একা একা ভালো লাগে না। বলাবাহুল্য, অবশেষে তাঁর সেই হাইকোর্টে আমার সেই উত্তাল জোরালো-ঐতিহাসিক আর্জি একদিন ঠিকই মঞ্জুর হলতবে সেটা প্রথম প্রার্থনার হাহাকারভরা উচ্চারণ শুনে না ; বরং দ্বিতীয় প্রার্থনার হুবহু বেপরোয়া ভয়ংকর অস্থিরতা দেখেইতিনি রূপা নামের একটি মেয়েকে আমার কাছে পাঠালেন।


রূপা, এমন একটি বিখ্যাত-মায়াবি-মধুর নাম যা শোনামাত্রই আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ডিস্টাব হতে হয়। রূপা হল সেই মেয়েটা যার নামে আমার রক্তের ভিতর দ্রুত পুরুষ হয়ে ওঠার মতো সেইসব সুরভিত সুনামি আসে ; আর আমার বাহির-ভিতরজুড়ে সৃষ্টি হয় দারুণ দারুণ সানুনয় দুর্দশা। রূপা আমার সাতকাহন ভালোবাসার নাম। রূপা আমার পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই প্রবাস থেকে সংগ্রহ করা এক আকাশ খুশির ঠিকানারূপা হল দাঁতে দাঁত চেপে সকল ধরনের ধকল সইতে পারায় মহান মন্ত্র। সম্মোহনের অসমাপ্ত দুপুর ; চারদিক ছেয়ে, বহুদূর থেকে ছুটে আসা অসংখ্য খুশি ; অথৈ সোহাগব্যথা। রূপা, এমন একটি প্রস্ফূটিত লাজুক কমল যাকে হৃদয়ের ভিতরে অনেক দূর অব্দি বহুযত্ন করে রেখে তালা ঝুলিয়ে চাবিটিকে ফেলে দিই, বহুদূরের কোনো অজানা গ্রহেরূপা এমন একটি হাইড্রোজের কবিরাজি নাম যার জন্য কতরকমভাবে বাঁচব ; আর বাঁচতে না পারলে সই, শুধু তার জন্যই খরস্রোতে খুব-খারাপভাবে মরবসেই রূপার মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে থাকা রেশমি সুবাসই আমাকে সর্বদা বিভোর করে রাখে। এই রূপাই আমার সারাটাজীবনের সবটুকু বানভাসি কামনা-বাসনা আর উপাসনা



রচনাটিঃ অডিও সিডি - "কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল" থেকে নেওয়া হল।
কাহিনী ও কবিতা - সুব্রত সামন্ত (বুবাই)
https://web.facebook.com/profile.php?id=100005822866092

রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

হাঁটতে হাঁটতে

হাঁটতে হাঁটতে

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




নেহাতই আর চলছিল না 
তাই শুধু তোমার কাছেই আসা। 
আর কিছু নয় নিজেকে তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে 
আরো কয়েকটাদিন দায়মুক্ত থাকা। 

কিছু নেবো, কিছু দেবো সবাই যেটা বলে ; 
কাছে না আসলে এতসব কিছু কিভাবে বল মেলে ? 
তাই আসলাম চলে। 
এখন সবই তোমার হাতে 
একটা আস্তজীবন জড়িয়ে গেছে 
তোমার ছোটো একটা হ্যাঁ আর নাতে। 


রচনাটি - সুব্রত সামন্ত-র "কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল" অডিও সিডি থেকে নেওয়া হল।
যেটি আসন্ন বইমেলাতে পাওয়া যাবে।

https://web.facebook.com/profile.php?id=100005822866092