শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

কঠিন অঙ্ক


কঠিন অঙ্কসুব্রত সামন্ত (বুবাই)


আবার বহুদিন বাদে আমার হাতে তোমার সেই ‘কাঙালকরা চিঠি’
অতঃপর আবার আমার বুকের আনাচ-কানাচজুড়ে জেগে ওঠা
‘তোমার চলে যাওয়া’...    আর ‘ফিরে না আসা’ ।
এরই মাঝে তুমি আবার জানতে চেয়েছো :
‘কোথায় আছি’ ? ‘কেমন আছি’ ?
নিজেকে আরেকবার নিংড়ে স্তব্ধ করে দিয়ে
আমিই বরং নাহয় তোমার কাছে জানতে চাই :
‘তুমিই বলো—
জন্ম থেকেই নষ্ট ভালোবাসা নিয়ে কেমন থাকতে পারি’ ?
বিশ্বাস কর বা ছাই না কর !
শুধু বিশেষ কারো উপস্থিতি এ বুকে প্রবল জোরালো হলে
এখনো শুরু হয় অথৈ উল্টোপূরাণ।
আবার পরপর গিঁড়ো খুলে ধরা পড়ে...
পুরানো আঘাতের সদ্যোজাত ব্যথা।
ভয়ও হয় ; না-জানি জীবন কখন রেগেমেগে কিনা করে বসে।
তখন লাগাতার ক্ষয়ক্ষতির ছয়লাপে ছয়লাপে
আমার এযাবৎ সঞ্চয়ের পাশে মস্ত একটা শূণ্য এসে
গুণ হয়ে জুড়ে বসে।
অমনি টুকরোটুকরো কিছু ভুলেভরা ভুল, অনুসারী হয়ে এ বুকে খুব বাজে।

সেই থেকে আমি আজো বসে থাকি কোথায় সেই হুবুহু বিকেল ?
প্রেমের তাকজুড়ে আমার যত প্রথম প্রেমের ঝুড়িভরা হামাগুড়ি
এইবুঝি ঠায় হাঁটে... আর

আমার চোখের দৃষ্টির ছিটে তোমার সারনেম পাল্টে ফ্যালে।
যাই হোক
আপাতত এক চাপাকান্না এসে
এইসব ইতস্তত শব্দপরাগকে চেটেপুটে খেয়ে গেছে।
আর শেষপর্যন্ত লোকদেখানো-মনগড়া দিনগুলো আমাকে এখনো
একপ্রকারের লাগাতার থাপ্পড় মেরে, বাস্তবেই ধরে রেখেছে।

তবে শুধু মাঝে মাঝে
            সেই সেদিনের তরতাজা ঘায়ে
কেউ শুশ্রূষা দিয়ে ভালো করে গেলেও
ভেতরে ভেতরে এখনো তেমনই প্রবল তরতাজা আছে।

যেভাবে আগ্নেয়গিরি নিভে গেলেও বিলুপ্ত হয় নি, ভূগোলে।

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

বারোমাস্যা

বারোমাস্যা

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)



সেই মেয়েটি এখন
ছেলেটার কাছে ; শুধুই সাজানো সার-সার অলংকৃত স্মৃতির সাথে
পুঁজি হয়ে রয়ে গেছে।
তাছাড়া আর কিই-বা করতে পারে বেচারা হতভাগা ছেলেটা
‘অন্য আর এক মেয়ের সাথে’ এখন যে তার
বিয়ে হয়ে গেছে।
তাকে, বউ নামের এই তুচ্ছ-জরুরি সামগ্রটিকে গ্রহণ করতে হয়েছে
‘জোর করেই’

ছেলেটি এখন আদ্যোপ্রান্ত ভীষণ ব্যস্ত
এই নতুন মেয়েটির গুচ্ছ গুচ্ছ সংসার সাজাতে।
কিন্তু নিরুপায়-অবুঝবখাটে ছেলেটি কি পারবে :
এতসব প্রার্থিব-অপ্রার্থিব ব্যথাকে এতটুকু বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখে
এই নতুন মেয়েটির প্রতিটা যাবতীয় চাহিদা মেটাতে ?

শুধু মেয়েটির কথা ভেবে ভেবে
                   এই ছেলেটি এখন
‘না-ভালোবেসেও’ অনেক কিছু করে
যেমন ইচ্ছা না থাকলেও
তবু প্রতিরাতে একান্ত হতে হয় ;
এই নতুন অচেনা অপ্রতিভ মেয়েটির সাথে।
অপরাধ জেনেও
শুধুমাত্র বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-সজ্জন, বাবা-মা আর সমাজের অননুযোগের ভয়ে ;
তাকে ‘ভালোবাসার নামে’ নিঃশেষে ধর্ষন করতে হয়
মেয়েটিকে।

এছাড়া
একপ্রকারের বাধ্য হয়েই
               মৃত্যুর দিন পর্যন্ত
শুধু ‘এই মেয়েটিকেই’ তার মেয়ের মা করে ;
তার সব একান্ত অভিনব দুরদার স্বপ্নের স্বপ্নচারিনী ভেবে ;
সারাটাজীবন শুধু সাথে করে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে।
আর তার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বিস্তৃত দিনগুলো ;
তাকে শুধুই মঞ্জুর হওয়া মৃত্যুর কাছাকাছি ঠিকানায় রেখে
রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করবে।
কেউ কোনোদিন পড়বেনা ছেলেটার নিঝুম মনের কথা !
তার গোপন মগ্ন ভালোবাসার কথা ;
গোপন অবধারিত ব্যথা হয়েই রয়ে যাবে।


ভবদীয়

ভবদীয়

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




যেখানেই থাকি
তোমার ঐ লাবণ্যে মাখামাখি শরীরে মিশে থাকে :
          আমার চোখ ;
          আমার হাত।

যেখানেই থাকি
অজান্তেই আমার ঠোঁটে, আপনা হতেই উঠে আসে :
          তোমার নাম ;
          তোমার ছবি।

যেখানেই থাকি
আমার সমগ্র পাওয়াকে জড়িয়ে থাকে ঠিকই :
          তোমার চাওয়া ;
          তোমার বিলুণ্ঠি।    



সুব্রত সামন্ত (বুবাই)-এর প্রেমের কবিতা 

প্রেতাত্মা এবং প্রেতছায়া

প্রেতাত্মা এবং প্রেতছায়া

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)


সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো সত্যিকারের মিথ্যেকে কীরকমভাবে আঁকড়ে ধরছে।

সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো মিথ্যেকারের সত্যিকে কীরকমভাবে আঁকড়ে ধরছে।

সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো মিথ্যেকারের মিথ্যেকে কীরকমভাবে আঁকড়ে ধরছে।

সত্যিকারের মানুষজন সত্যিকারের বাঁচবার জন্য...
অনেকগুলো সত্যিকারের সত্যি থেকে কীরকমভাবে সত্যি-সত্যিই দূরে সরে যাছে।   


আমাদের ভালোবাসার গল্প

আমাদের ভালোবাসার গল্প

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




আমার অপেক্ষার ডালপালাজুড়ে নাই-বা চাঁপা হয়ে ফুটলে ;
আমার গছানো আকাঙ্ক্ষায় বাগিচায় দু’দণ্ড বসে
নাই-বা কোকিল হয়ে গেয়ে গেলে ;
                                    ক্ষতি কি
সেই ভালো , আমি তবুও বিলম্বিত প্রহর গুনে গুনে টানা অপেক্ষা করব।
আর এভাবেই সহাস্যে নিজের ভেতর নিজেকে আবারও হত্যা করে
কাটিয়ে দেবো : ‘আরো একটা অখণ্ড বসন্ত’।
কে জানে এভাবে না-পুরানো অসহ্য রাত জেগে
ব্যাথা জমা করা তুমুল মন খারাপ নিয়ে,
আরো কতগুলো উপন্যাসের মৃত্যু দেখব ?
আর হৃদয়ের ভাঁড়ে অবিরাম নষ্ট হওয়ার কষ্ট জমাবো ?
পাশাপাশি, নিজেকে আরো আড়ালে গেঁথে রেখে
নিজেকেই আরো জব্দ করব।

ডাকপ্রিয়ন, টেলিফোন, কোকিল ডাকা, পথ চেয়ে থাকা...
এগুলো তবুও নানারঙে এমনই অস্থির বেহাল থাকবে ;
যতখানি ‘হৃদয়ভাঙা-হৃদয়ে’ হৃদয় জমে থাকে অনন্ত।
বাসর সাজিয়ে পালকি পাঠিয়ে
                          দু’হাতে মেহেদি, সিঁথিতে সিঁদুর
বুকে ধুক ধুক, একখানা চুমু...
লোকে নাই-বা সেসব কিছু জানল ! অতশত !

লোকে নাহয় জানবে:
আমাদের ভালোবাসার গল্প ;
হ্যাঁ রূপা, তোমার আমার প্রেমের কথা অল্প অল্প। 





সুব্রত সামন্ত (বুবাই)
খানাকুল , হুগলী
১৪.১২.২০১৫

দিগন্ত

দিগন্ত

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)

“সখী লুকিয়ে লুকিয়ে হাজার কারচুপি করে
একপৃথিবী মেলামেশা
আর মনে অ্যাকাউন্টে জমিয়ে কিছু
মন ভরতি খুচরো-নগদ
কোমল নিষাদ ভয় ;
বাড়িতে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে—
আকাশ সমান অভিনয় করে
বাড়িয়ে বাড়িয়ে সাড়ে আঠানব্বই রকমের
মিথ্যার জঞ্জাল বাড়াতে হয়।
এরপর শরীরে বহুকালের জমানো
গোলাপভেজা শিশিরের প্রলেপ লাগাবে
পাঁচখানা সম্মতির চাঁদ।
মন করবে কেমন কেমন !
আত্মজ স্বপ্নের খোঁজে কঁকিয়ে উঠবে অন্যান্য সমস্ত অন্তর্গত কোলাহলেরা
নতুন ঠিকানা হবে অনেকখানি জাতীয়বেদনার জবরদখল।
উপচে ওঠা ফেরারি সর্মপণের স্পর্ধা মধ্যান্তরে মিশে
গড়বে সাড়ে তিনহাতের হৃদয় টাটানো সম্পর্ক।

তাকেই তো সখী ভালোবাসা কয়।”  


আজন্ম

আজন্ম

সুব্রত সামন্ত (বুবাই)




যত দুঃখ দেবে দাও, কিলো-গ্রাম হিসাবে সব সহ্য করব
ভালোবেসে নিতে পারি
তোমারও সবটুকু ‘রক্ত-মাংসে-গড়া’ দীর্ঘ সিরিজের এই কষ্ট।
তবু শুধু ক্যালেন্ডারের খাপগুলোতে আমাকেই তলব কর।
আজীবন না হোক ; নাহয় ভুল করেই একরত্তি ডাকো
যেখানেই থাকিযতদূরেই থাকি
ঝোলাঝুলি নিয়ে সময়মতো ঠিকই পৌঁছে যাবো।
বুকের মধ্যে স্বরলিপি ছাপিয়ে আজানু ব্যাপক সন্ধ্যা ঘনালে
অস্থির চেতনায় মধ্যে একটানা গোঁয়ার ‘কান্নাপাওয়া বৃষ্টি’ নামলে
চেনা পথে আবারও পা হারাবার চিরকালের আবেগমাখা
দিস্তে দিস্তে হুলুস্থুলু ইচ্ছাটুকু হলে
রাজকীয় প্রত্যাশায় বিছানো সূচিপত্রে একমুঠো শব্দ ফের
টুপটাপ ঝরে পড়লে
শুধু এই আমাকেই তলব কর ;
যেখানেই থাকি যেভাবেই থাকি
সমস্ত বিচরণ ভুলে, অনন্ত চৈত্রের সাথে বাসি হৃদয়ে
বহুদূর অব্দি দ্রুত ভেসে এসে পুনরায় কবুল করব।

কেন, তোমার হাসিখুশির রৌদ্রে চলকে ওঠা হৃদয়ের রাজধানীতে
এত সারি সারি ঘুমের অজানিত প্রবাহী স্বপ্নহরণ ?
কেন, তোমার স্বপ্নের ডিম পাড়া এই সুখের অলিন্দে এতসব
অহেতুক ভারী ভাঙচুর পারিজাত রক্তক্ষরণ ?
কাছে গিয়ে, প্রণয়-মার-খাওয়া বিবাগী নদী হয়ে
আমি আবারও এলোমেলো ভালোবেসে একটাএকটা করে
সবকিছু জানতে চাইব।
পারানি না নিয়েই তোমাকে ঠিকই, অনিবার্য পার করে দেবো।

এত এত ভালোবাসবার পরেও ;
তবু কেন জানি না
তোমাকে ছেড়ে তবু অনায়াসেই দূরে সরে থাকতে হয়
মোটের উপর এর চেয়ে বড় কিছু হিতব্রতী কষ্ট হয় ?
সিলেবাসে কোথাও এর চেয়ে বড় ! আছে নাকি কিছু
নাকাল করা ভয়ের মতো ভয় ?
কারো কাছে জানা আছে কি এর সঠিক দুঃখমোচী-স্পর্ধিত উত্তর ?
এরপরেও তুমি অবলীলায় খুব বেশি আলো করে বসে থাকো অপরের ঘর।
অথচ আমি আজও তোমার মতো ভুল আবেগে তোমাকে ভুলে
ছককষে হতে পারি নি : মুখোমুখি ‘ঘোরতর-নিষ্ঠুর-নির্দয়’    



অডিও সিডি - "কাল সারারাত বৃষ্টি হয়েছিল"
https://web.facebook.com/profile.php?id=100005822866092